লিডারশিপ বা নেতৃত্বের নয়টি মিথ নিয়ে আজকের আলোচনা। শুরুতেই বলে রাখা দরকার, নেতা হলে এই মিথগুলো ভালোভাবে জেনে রাখা জরুরি। তা না-হলে অনেকসময় হোঁচট খেতে হতে পারে।
এক. আগেও লিডার ছিলাম তাই এখনো আমি লিডার হতে পারি
মিথ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে অভিজ্ঞতা। যে আগেও লিডার হিসেবে ছিল, সে এখনো লিডার থাকতে পারবে।
প্রকতার্থে অভিজ্ঞতা তখনই কাজে দেয়, যখন মানুষ বিনয় ও ম্যাচুরিটির মাধ্যমে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে, যখন বুঝতে পারে যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আর পরিস্থিতিই ভিন্ন হয়ে থাকে।
অনেক লিডার বা নেতা তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভুলতে পারে না এবং হুট করেই লিডারশিপের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নেমে পড়ে।
দুই. অনেক ব্যস্ত তাই আমাকে একসাথে অনেক কাজ করতে হয়
নেতা বা লিডার হিসেবে আপনার মূল কাজ হলো : অন্যদের কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া। সরাসরি কোনো রিপোর্ট দেখার সময় ইমেইলের জবাব দিয়ে দেওয়াটা একমাত্র যথেষ্ট না।
লিডার হিসেবে আপনাকে সবসময় উপস্থিত থাকতে হবে, কিন্তু তারপরও অনেক লিডারই কাজের সময় অতি সহজে অন্যদিকে মনযোগ সরিয়ে নেয়।
তিন. লিডারশিপ দক্ষতা উন্নত করার মতো সময় আমার হাতে নেই
আপনি কখন অল্প ব্যস্ত থাকবেন এবং লিডারশিপ দক্ষতা উন্নত হলে আপনার প্রতিষ্ঠান কতটুকু এগিয়ে যাবে তা ভাবুন।
চার. নেতারা জন্মগতভাবেই লিডার, লিডারশিপ শেখা যায় না
যদিও সবাই নেতা বা লিডার হতে পারে না বা হতে চায় না। কিন্তু লিডারশিপ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শেখা সম্ভব।
লিডারশিপ শেখা যায় না—এই কথা আপনার নেতৃত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তরায়।
পাঁচ. কী ঘটছে সে ব্যাপারে কর্মচারীরা আমার কাছে সত্যটাই বলে
হয়তো তারা সত্যিটাই বলে। তবে, পদমর্যাদা ও ক্ষমতার ক্ষেত্রবিশেষে আপনি যদি মনে করেন, তারা আপনার কাছে পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সহজে সত্য কথা তুলে ধরছেন, তাহলে আপনি বোকামি করছেন।
আপনি যদি তাদের কাছ থেকে সব তথ্যই চেয়ে থাকেন এবং তথ্য দেওয়ার জন্য যদি কর্মচারী অথবা সহযোগীদেরকে সমস্যায় পড়তে না হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। সেক্ষেত্রে হয়তো বেশিরভাগ সময়ই তারা আপনাকে সত্যটাই বলবে।
ছয়. লিডার হিসেবে আমাকে সবসময় অন (চালু) থাকতে হয়
অন্যদের থেকে লিডারদেরকে জবাবদিহি বেশি করতে হয় ঠিকই। তার মানে এই নয় যে, সবসময় লিডারশিপের ভাব ধরে থাকতে হবে।
যখন লিডারকে সারাক্ষণই কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, তখন কিন্তু নিজস্বতা বজায় রাখা ও ভুল সংশোধন করা হয়ে উঠে না।
মাঝে মাঝে নিজের লিডারশিপকে বন্ধ রাখতে হয়, যেন অন্যরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে এগিয়ে আসতে পারে।
সাত. আমি প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছি, তাই একে লিড করার অধিকার রাখি
কোনো কিছুর শুরুতে আপনি থাকলে পরবর্তী সময়ে বলতে পারেন, শুরু থেকেই সঙ্গে ছিলেন। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর হাল ধরে রাখতে হলে, আপনাকে সেই অনুযায়ী যোগ্যও হতে হবে।
প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। আর এটা সচেতন প্রয়াসের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকে থাকা মানে কিন্তু লিডারশিপ নয়।
আট. আমাকেই কাজ করে দেখাতে হবে, দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে ইত্যাদি
সঠিক কাজ করে দেখালে কোনো ক্ষতি নেই। তবে বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায়, লিডাররা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে—যা তাদেরকে মানায় না। এমন কাজ যা অন্যদের করা সাজে, একজন লিডারের নয়।
দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইলে লিডারশিপের কাজে দক্ষতার ছাপ রাখুন, যেমন—সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।
নয়. লিডারদের ভয় থাকে না
এটা মোটেও সঠিক নয়, সবারই কোনো-না-কোনো ভয় থাকে—যা সহজে দূর হয় না। ভয়কে চিহ্নিত করতে হবে, যেন অজানা কোনো কিছু মোকাবেলার সময় আমরা সজাগ থাকতে পারি।
ভয় কাটানোর চেয়ে, আগে জানতে হবে—ভয়টা কোথায়, কী কারণে।
—ডেস্ক মোটিভেশন
…………………
পড়ুন
দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে ১৭টি পরামর্শ
টানা কাজে ছোট বিরতি নেয়ার উপকারিতা
ডেস্কে কাজ করলে কিভাবে সুস্থ ও এনার্জিটিক থাকবেন
আমন্ত্রণ